মাঈনুল ইসলাম নাসিম : বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ইউরোপের ৬ স্বনামধন্য বাংলাদেশীকে এবারের ‘আয়েবা অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করা হচ্ছে। আটলান্টিক তীরে লিসবনে চলতি মাসের ৩০ ও ৩১ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা)’র দ্বিতীয় গ্র্যান্ড কনভেনশনে তাঁদের এই বিশেষ সম্মাননা জানানো হবে। প্যারিসে অবস্থিত আয়েবা সদর দফতর থেকে ২১ মে বৃহষ্পতিবার জারি করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপরোক্ত তথ্য জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের গৌরব উক্ত ৬ গুনীজন হচ্ছেন – কূটনীতি ও নারীর ক্ষমতায়ণ ইস্যুতে ব্রাসেলসে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূত ইসমাত জাহান, কমিউনিটির উন্নয়নে ফ্রান্সে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বর্তমানে বার্মিংহামের কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব তোজাম্মেল টনি হক, মেইনস্ট্রিম পলিটিক্সে লন্ডনের হাউজ অব লর্ডসের সদস্য ব্যারোনেস পলা মানযিলা উদ্দিন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য আমস্টার্ডাম প্রবাসী মাঈদ ফারুক, কমিউনিটির উন্নয়নে ‘প্যারিস বন্ধু’ খ্যাত শহিদুল আলম মানিক (মরণোত্তর) এবং শিল্প-সংস্কৃতিতে মিলান প্রবাসী ফাইবার এন্ড টেক্সটাইল আর্টিস্ট শফিকুল কবীর চন্দন।
পেশাদার কূটনীতিক ইসমাত জাহান গত প্রায় ৬ বছর ধরে ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে আসছেন অত্যন্ত সাফল্যের সাথে। ডিপ্লোম্যাট হিসেবে ৩৩ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার তাঁর। প্রখর মেধা ও বিশাল অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি ইউরোপিয়ান কমিশন ও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছেন। ইসমাত জাহানের ক্যারিশমেটিক ডিপ্লোমেসিতেই রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি পরবর্তী ইউরোপের বাজারে বড়সড় বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশের প্রধান রফতানী খাত আরএমজি তথা তৈরী পোশাক শিল্প। ব্রাসেলসে তাঁর দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে বাংলাদেশে ঘটে রানা প্লাজা ধ্বংসযজ্ঞের মতো ভয়াবহ বিপর্যয়। বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে সার্বক্ষণিক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অসামান্য অবদান রাখেন বাংলাদেশের রফতানী বানিজ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষায়। ২০০৯ সালে ব্রাসেলসে যোগ দেয়ার আগে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ণ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অনেক আগে থেকেই সুপরিচিত ইসমাত জাহান বাংলাদেশের সবচাইতে সিনিয়র নারী কূটনীতিক। জাতিসংঘের ‘কমিটি অন ইলিমিনেশন অব ডিসক্রিমিনেশন এগেইন্সট উইম্যান (সিডও)-এর সদস্য পদে ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশকে গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত করেন তিনি। ইসমাত জাহানের জন্ম ১৯৬০ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নেয়া শেষে ১৯৮২ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে যোগ দেন তিনি। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন থেকে ল এন্ড ডিপ্লোম্যাসিতেও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি সাফল্যের সাথে। ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ‘ফেলো’ ইসমাত জাহান নেদারল্যান্ডসে (২০০৫-২০০৭) বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন ছাড়াও ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং বৈদেশিক বিভিন্ন মিশনে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
ষাটের দশক থেকে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামের অধিবাসী তোজাম্মেল টনি হক। স্বনামধন্য এই কমিউনিটি ব্যক্তিত্বের জন্ম বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের নওগাঁ জেলায় চল্লিশের দশকে। পড়াশোনার শুরু নওগাঁতেই, স্কুল-কলেজ শেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স। স্কুল জীবন থেকেই জড়িত ছিলেন ছাত্র রাজনীতির সাথে। ১৯৫২ সালে তিনি স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে মিছিল-ধর্মঘটে সক্রিয় অংশ নেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও রাজনীতি করেছেন দাপটের সাথে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল ছাত্র সংসদে ভিপি ছিলেন টনি হক। ১৯৬১ সনে আইয়ুব বিরোধী রাজনীতির অপরাধে কারাবরণ করেন তিনি। রাজবন্দী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সাথে ৬ মাস কারাজীবনের গৌরবের অধিকারী তিনি। পূর্ব ও পশ্চিম তথা সমগ্র পাকিস্তানের ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব দ্যা স্টুডেন্টস অব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনিই প্রথম কোন বাঙালী ছাত্রনেতা যিনি ঐ পদের অধিকারী হয়েছিলেন। কারামুক্তির বছর ১৯৬১ সালে কানাডায় পাড়ি জমাবার পর আর দেশে ফেরা হয়নি তাঁর। কানাডায় ২ বছর অবস্থানকালীণ সময়ে এবং পরবর্তীতে ১৯৬৩ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে বসবাসকালীণ সময়েও স্বৈরাচার আইয়ুব বিরোধী ব্যাপক জনমত গড়ে তোলেন টনি হক। ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় কারারুদ্ধ বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করতে এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীণ অস্ত্র ক্রয়ের জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে প্রবাস থেকে নেতৃত্ব প্রদান করেন তিনি। সত্তর ও আশির দশকে ইংল্যান্ডে ছিল বর্ণবিদ্বেষের এক বিষাক্ত পরিবেশ, যেখানে অভিবাসী সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ছিল অসহায়। বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলন ক্রমশ দানা বাঁধতে শুরু করলে তোজাম্মেল টনি হক সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৮-১৯৯০ ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন শেষে প্যারিসেই যোগ দেন ইউনেস্কোর সদর দফতরে। ইউনেস্কোর ডিজি’র সিনিয়র স্পেশাল এডভাইজার হিসেবে টনি হকের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। শিক্ষা ও কমিউনিটির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি ২০০৩ সালে এই নিবেদিতপ্রাণ বাংলাদেশীকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রী প্রদান করে।
ব্রিটেনের বাঙ্গালী কমিউনিটির ইতিহাসে ব্যারোনেস মানযিলা পলা উদ্দিন একটি নাম, একটি ইতিহাস। তাঁর জন্ম ১৯৫৯ সালে রাজশাহী জেলায়। প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশী হিসেবে ১৯৯৮ সালে তিনি বিলেতের পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে সদস্য হবার গৌরব অর্জন করেন। এর আগে ১৯৭৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে পরিবারের সাথে লন্ডনে আসেন মানযিলা পলা উদ্দিন। নর্থ লন্ডন বিশ্ববিদ্যালযয়ের সামাজিক উন্নয়ন বিভাগ থেকে ডিপ্লোমা শেষ করেন। সত্তরের দশকের শেষের দিক থেকেই তিনি বিলেতের সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেকে জড়াতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় আশির দশকে ইয়থ এন্ড কমিউনিটি ওয়ার্কারের সাথে যুক্ত হন। টাওয়ার হ্যামলেটস স্যোশাল সার্ভিসের একজন কর্মী হিসাবে বেশ সুনাম অর্জন করেন তিনি। আশির দশকেরই শেষের দিকে মানযিলা পলা উদ্দিন টাওয়ার হ্যামলেটস উইম্যান্স হেলথ প্রজেক্টের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি নিউহাম সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার সাথে যুক্ত হন। প্রথম কোন বাঙালী হিসাবে লেবার পার্টি থেকে ১৯৯০ সালে তিনি ‘দ্য লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস’ অঞ্চলের কাউন্সিলর নির্বাচিত হবার পর সফলতার সাথে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালনকালীণ সময়েও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন মানযিলা পলা উদ্দিন। ১৯৯৯ সালে তিনি বিলেতের মাটিতে এশিয়ান মহিলাদের উন্নয়নের লক্ষে ‘জাগোনারী’ নামে একটি সংস্থা তৈরি করেন, যা তাঁকে স্থানীয়ভাবে আরও বেশি পরিচিত করে তোলে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ লর্ডসকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে পশ্চিম ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী মুসলিম মহিলা হিসেবে। বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাজ্যের পরীক্ষিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত মজবুত করতে ব্যারোনেস মানযিলা পলা উদ্দিনের যুগান্তকারী ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় সোনার হরফে লিপিবদ্ধ থাকবে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে সর্বকনিষ্ঠ ‘কোম্পানি কমান্ডার’ হিসেবে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মাঈদ ফারুক। নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টার্ডামে ১৯৭৮ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। মাঈদ ফারুকের জন্ম ১৯৫৪ সালে সিলেটে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনই করেননি, ৪ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর সাবসেক্টরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কম্যান্ডো হিসেবে কুকিতল ক্যাম্প থেকে দুঃসাহসী সব অভিযান পরিচালনা করেন। চারিদিকে ছোট ছোট টিলার আবর্তে কুকিতল ক্যাম্প ছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আতংক। ডেমোলিশন গ্রুপের অন্যতম সেরা তরুণ কম্যান্ডো হিসেবে ‘হিট এন্ড রান’ অনেক সফল অপারেশনে অংশ নেন মাঈদ ফারুক। রাজনৈতিক কারণে স্বাধীনতার মাত্র ৭ বছরের মাথায় প্রিয় মাতৃভূমিকে বিদায় জানাতে হয় তাঁকে। টানা ৩ যুগের বেশি প্রবাস জীবনেও ছিলেন বাংলাদেশের সুখ-দুঃখের সাথী। যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে সর্বাগ্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি। বাংলাদেশে শিক্ষার প্রসারেও অসামান্য অবদান তাঁর। মৌলভিবাজারের জুরী উপজেলায় মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন তৈয়বুন্নেসা খানম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, যেখানে অধ্যয়নরত আছে প্রায় পাঁচ হাজার ছাত্র-ছাত্রী। বিদেশ বিভুঁইয়ে বাংলাদেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে বছরের পর বছর নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রাণপুরুষ মাঈদ ফারুক। একাধারে তিনি আমস্টার্ডামের একজন সফল ব্যবসায়ী। ডাচ-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নেও বিশেষ অবদান রেখেছেন এই গুণীজন।
সাড়া জাগানো সংগঠন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা)’র প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম মহাসচিব মরহুম শহিদুল আলম মানিক। ২০১২ সালে গ্রীসের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত প্রথম আয়েবা কনভেনশনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। জন্ম ১৯৫৯ সালে বাংলাদেশের ফেনী জেলায়। ১৯৮৬ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস ছিল তাঁর প্যারিসে। ইউরোপের স্বনামধন্য কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব শহিদুল আলম মানিক ফ্রান্সের হাজার হাজার বাংলাদেশীদের কাছে ‘প্যারিস বন্ধু’ হিসেবে শুধু সুপরিচিতই ছিলেন না, প্রবাসী মেহনতী জনতার সবচাইতে কাছের এই মানুষটির জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। জনদরদী সমাজসেবক শহিদুল আলম মানিক ছিলেন একাধারে ফ্রান্সের একুশে উদযাপন পরিষদের নন্দিত আহবায়ক এবং প্যারিসে বাংলাদেশ মসজিদের সফল প্রতিষ্ঠাতা। এখানকার বাংলা স্কুলেরও ফাউন্ডার ছিলেন তিনি। সর্বোপরি ফ্রান্সের বাংলাদেশ কমিউনিটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার পেছনে আজীবন নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন শহিদুল আলম মানিক। প্রাণের সংগঠন আয়েবা প্রতিষ্ঠার এক বছর পূর্তির আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর ‘না ফেরার দেশে’ চলে যান তিনি। তাঁর অকাল মৃত্যতে ফ্রান্স সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। বন্ধুবৎসল, সদালাপী ও নিরহংকারী শহিদুল আলম মানিক তাঁর কর্মগুণে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন প্রবাসীদের হৃদয়ের গভীরে। ইউরোপের যে কোন দেশের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে নেতৃত্বের ‘উজ্জ্বল আদর্শ’ তিনি।
বুননশিল্পী শফিকুল কবির চন্দনের বসবাস ইতালীর বানিজ্যিক রাজধানী মিলানে। ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশের নরসিংদীতে জন্ম প্রবাসী এই গুণী শিল্পীর। আপন মনে ছবি আঁকেন তিনি, তবে তা রং-তুলি দিয়ে নয়। ছবি বুনেন তিনি তাঁতে বাহারি তন্তু দিয়ে। পশম-রেশম, শন, উল, খড়-বিচালি, হোগলা, চামড়া, বাঁশ, লতা, পাতা, কাগজ, পাট, সুতো তথা তন্তু দিয়ে মনের রঙে তন্তু ভাস্কর্য নির্মাণ করেন প্রখর মেধাবী শফিকুল কবির চন্দন। ছাত্রজীবনেই তাঁর শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছিল এশিয়ান আর্ট বিয়েন্নাল এবং ন্যাশনাল আর্ট এক্সিবিশনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক পরবর্তী ভারতের শান্তিনিকেতন থেকে ফাইবার আর্টসে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি। বাংলাদেশে ফিরে ঢাকার চারুকলাতেই শিক্ষকতা করেন কয়েক বছর। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে চারুকলায় আয়োজিত প্রদর্শনীতে তাঁকে বিশেষ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম ট্যাপেস্ট্রি প্রদর্শনী হয় শিল্পী চন্দনের একক শিল্পকর্ম দিয়ে। ১৯৯৯ সালে কোলকাতায়ও প্রথম একক ফাইবার আর্ট প্রদর্শনীর কৃতিত্ব তাঁরই। ইতালী সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিল্পী শফিকুল কবির চন্দনের শিল্পকর্মের বেশ ক’টি একক প্রদর্শনী দারুন সমাদৃত হয়েছে ইতিমধ্যে। নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত শিল্প কর্মশালায়ও মেধাবী এই বাংলাদেশী শিল্পীকে ‘ইউরোপীয় কালচারাল আর্ট ফেলোশীপ’ প্রদান করা হয়। মিলানেই সপরিবারে বসবাস করেন পেশাদার এই সার্বক্ষণিক শিল্পী।